বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:১২ অপরাহ্ন
জিটিবি নিউজঃ কোভিড–১৯ রোগে আক্রান্ত এক রোগীকে অটোরিকশা ও অ্যাম্বুলেন্সে তুলে দিয়েছিলেন চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার নয় নম্বর পশ্চিম বেমশা ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম পুলিশসদস্য মো. মনির হোসেন।পরে ওই ব্যক্তি মারা যান। মৃত ওই ব্যক্তির লাশ দাফনেও অংশ নেন মনির। তাঁকে এসব কাজ করতে হয় কোনো সুরক্ষা পোশাক ছাড়াই। একপর্যায়ে করোনায় সংক্রমিত হন মনির।তবে চিকিৎসার পর বর্তমানে তিনি সুস্থ হয়ে বাড়িতে কোয়ারেন্টিনে আছেন। মনির হোসেন বলছিলেন, ‘সুরক্ষা পোশাক থাকলে হয়তো করোনায় সংক্রমিত হতাম না।’
গ্রাম–পুলিশ আইন সদস্যরা স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) অধীনে কাজ করেন। ইউপি চেয়ারম্যান তাঁদের বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদনের (এসিআর) অনেবেদনকারী এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রতিস্বাক্ষরকারী।
সাতকানিয়ার ইউএনও নূরে আলম প্রথম আলোকে বলেন, সরকারিভাবে গ্রাম পুলিশ সদস্যদের কোনো সুরক্ষা পোশাক দেওয়া হয়নি। করোনা আক্রান্ত এক প্রতিবেশীকে হাসপাতালে আনা-নেওয়ার সময় এক গ্রাম পুলিশ সদস্য করোনায় সংক্রমিত হয়েছিলেন বলে তিনি জেনেছেন।
দেশে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারি বিভিন্ন বাহিনীর সঙ্গে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে গ্রাম পুলিশও। গ্রাম পুলিশ সদস্যরা কোনো ধরনের সুরক্ষা পোশাক ছাড়াই এই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এমন কি করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তির লাশ বহন ও দাফন করতে হচ্ছে তাঁদের।
এমন পরিস্থিতির মধ্যে নিজেদের জীবন ও পরিবার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন গ্রাম পুলিশ সদস্যরা। তাঁরা দ্রুত সারা দেশের সব গ্রাম পুলিশ সদস্যকে ব্যক্তিগত সুরক্ষা পোশাক (পিপিই) ও সরঞ্জাম দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে সরকারের প্রণোদনাও চেয়েছেন।
সম্প্রতি করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া এক ব্যক্তির লাশ দাফন করেছেন নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার ১৪ নম্বর হাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম পুলিশ সদস্য মো. ফারুক। তিনি বলেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কোনো ধরনের সুরক্ষা পোশাক ছাড়াই ৩ মে ওই ব্যক্তির লাশ তাঁদের দাফন করতে হয়েছে। গ্রাম পুলিশ সদস্য আনোয়ার, জামাল ও করিমকে নিয়ে তিনি লাশ দাফনে অংশ নেন। এ সময় থানা-পুলিশ সদস্যদের গায়ে সুরক্ষা পোশাক থাকলেও তাঁদের কোনো সুরক্ষা পোশাক ছিল না।
করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ওই ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষার পর গত ৯ মে নেগিটিভ রিপোর্ট আসে বলে জানান ১৪ নম্বর হাজীপুরের ইউপি চেয়ারম্যান তরিকুল্লাহ জিন্নাহ। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, বিভিন্ন স্থানে জীবাণুনাশক ছিটানো, মানুষের ভিড় সামলানো, ঢাকা থেকে কেউ এলে বাড়ি লকডাউন করা, কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে পরিবহন ও হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করা, কেউ মারা গেলে সৎকারের ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন কাজ নিষ্ঠার সঙ্গে করে যাচ্ছেন গ্রাম পুলিশ সদস্যরা। তাঁদের সুরক্ষা পোশাক নেই। তবে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মাস্ক, সাবান ও অল্প কিছু হ্যান্ড গ্লাভস দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ গ্রাম পুলিশ বাহিনী কল্যাণ ফান্ড নামের সংগঠনের সভাপতি উজ্জ্বল খান বলেন, সারা দেশে প্রায় ৪৭ হাজার গ্রাম পুলিশ সদস্য আছেন। এর মধ্যে নাটোরে দুটি উপজেলা ও রাজশাহীর কিছু গ্রাম পুলিশ সদস্য পিপিই পেয়েছেন। বাকি সবাই পিপিই ছাড়াই করোনা পরিস্থিতির মধ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। কোথাও কোথাও লাশ বহন ও দাফনের কাজ করতে হচ্ছে সুরক্ষা পোশাক ছাড়াই।
উজ্জ্বল খান বলেন, একে তো অল্প বেতনে তাঁদের মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়, এর মধ্যে করোনায় জীবনের ঝুঁকি বাড়ায় পরিবার নিয়ে তাঁরা আতঙ্কের মধ্য আছেন। এমন পরিস্থিতির মধ্যে সরকারের বিশেষ প্রণোদনা ও জাতীয় বেতন স্কেলে বেতনের দাবি জানান তিনি।
কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার গ্রাম পুলিশ সদস্য মো. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের উপজেলায় কোনো গ্রাম পুলিশ সদস্য পিপিই পাননি। করোনা মোকাবিলায় জীবনের ঝুঁকি নিয়েই ডিউটি করে যাচ্ছি।’
গ্রাম পুলিশ বাহিনী কর্মচারী ইউনিয়নের মহাসচিব এম এ নাসের প্রথম আলোকে বলেন, দেশের সব গ্রাম পুলিশ সদস্যের পিপিই ও ঝুঁকি ভাতার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেই আবেদনের কোনো সাড়া পাননি। ফলে বাধ্য হয়েই পিপিই ছাড়াই গ্রাম পুলিশ সদস্যদের করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত দেশে চারজন গ্রাম পুলিশ সদস্য করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন। এঁদের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, কারও প্রতি বৈষম্য দেখানোর কোনো সুযোগ নেই। যাঁরা করোনার রোগীদের সেবা করছেন, তাঁদের সুরক্ষা পোশাক দেওয়া হচ্ছে। গ্রাম–পুলিশ সদস্যদের দেওয়ার জন্য কোনো দাপ্তরিক চিঠি দেওয়ার দরকার হলে দেব।